ইসরায়েলি স্থল অভিযানে লেবাননে ৩০ কমান্ডারসহ ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত
- By Jamini Roy --
- 06 October, 2024
গত ছয় দিনে ইসরায়েলের স্থল ও বিমান অভিযানে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ৪৪০ সদস্য নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩০ জন শীর্ষ কমান্ডার রয়েছেন, যারা গোষ্ঠীর বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বে ছিলেন।
শনিবার জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, "আমরা হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের উত্তর দিকে পিছু হটতে বাধ্য করছি। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, বাকিরা ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হয়েছে।" একই সঙ্গে, হিজবুল্লাহর অবস্থানের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, "হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান থামবে না। আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো, এবং কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।"
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর একটি। ইরানের মদদে গোষ্ঠীটি লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করে। এর পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে শুরু করে।
গত এক বছরে লেবাননের সংঘর্ষে ২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৫০০ এরও বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননে বড় আকারের হামলা শুরু করে। এতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন। গোষ্ঠীর চেইন অব কমান্ড প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই হামলার পর ৩০ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল স্থল অভিযানের ঘোষণা দেয়। যদিও আইডিএফ আগে জানায়, সীমিত আকারে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে, বাস্তবে এটি আরও বিস্তৃত আকার নিয়েছে।
এদিকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধে পিছু হটবে না এবং ইসরায়েলের আক্রমণ মোকাবিলা করে যাবে। গোষ্ঠীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আমাদের যোদ্ধারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত।" ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ ও হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই অঞ্চল থেকেই গোষ্ঠীটি তাদের সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। ইসরায়েলের স্থল অভিযান এখন এই এলাকাতেই কেন্দ্রীভূত হয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে লেবাননের পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
গাজায় যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত শুধু ইসরায়েল ও লেবাননেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই ছড়িয়ে পড়তে পারে।